Monday, February 21, 2022

বরিশালে স্কুল ছাত্ররা ঠিফিনের টাকা জমিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদ দিবস পালন।


মোঃসিরাজুল হক রাজু 
স্টাফ রিপোর্টার।


এক টাকা, দুই টাকা করে জমিয়ে শিশুরা বেশ কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে গোটা মহল্লায় তৈরি করেছে ১৫টি শহীদ মিনার। তবে, জমানোর টাকা দিয়ে যে শহীদ মিনার বানানো হয় এমনটা নয়, শিশুদের উদ্যোগেই চাল-ডাল কিনে খিচুড়ি নয়তো মিষ্টি জাতীয় খাবার কিনে এনে বিতরণও করা হয়।আর এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগের দিন থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি বিকেল পর্যন্ত বরিশাল নগরের রসুলপুর কলোনিতে শিশুদের মধ্যে যেমন উৎসাহের কমতি নেই, তেমনি অভিভাবকরাও বেশ আনন্দিত।
শিশুদের কাজে তারাও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেসঙ্গে পুরো আয়োজনকে ভিন্ন মাত্রা দিতে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করে থাকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। কাচা হাতে বানানো শহীদ মিনার।
স্থানীয়রা জানান, মূলত ৯-১০ বছর আগে শহীদ মিনার নির্মাণের এমন আয়োজনের উদ্যোগটা নেওয়া হয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের তৎকালীন নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তীর হাত ধরে। এরপর থেকে ২১ শে ফেব্রুযারি মানেই কীর্তনখোলা নদীর তীরে রসুলপুর কলোনিতে ভিন্ন এক আয়োজন। পুরো আয়োজনটি শিশু কেন্দ্রীক হলেও ছোট-বড় সবাই এতে সহায়তা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোকলেছ বলেন, শিশুরা শহীদ মিনার নির্মাণের এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে এক টাকা, দুই টাকা করে জমাতে শুরু করে। সেই জমানো টাকা দিয়ে শহীদ মিনার তৈরির পাশাপাশি তবারক বানিয়েও খাওয়ায়। কাচা হাতে বানানো শহীদ মিনার। ছবি: বাংলানিউজ
কাচা হাতে বানানো শহীদ মিনার। ছবি: বাংলানিউজ
ছনিয়া নামে এক নারী বলেন, মনীষা আপা নিজে থেকে এ প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেয়। শিশুরা শুধু শহীদ মিনার বানায় এমনটা নয়, তারা শহীদদের সম্পর্কেও জানতে পারেন। এইতো আমার ছেলে তার মামার কাছ থেকে পাওয়া টাকা নিয়ে রঙ্গিন কাগজ, রং ও কাঠের গুড়া কিনে এনে শহীদ মিনার বানিয়েছে। সে বানাতে পেরে বেশ খুশি। তার ভালো লাগা আমাদের কাছেও ভালো লাগছে।কাকলী নামে অপর এক নারী বলেন, তার শিশুরা টিফিনের টাকা জমিয়ে শহীদ মিনার বানিয়েছে। নির্মাণ করা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাও জানিয়েছে শিশুরা।
শিশুরা বলছে, যারা বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এ শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে তারা।আর এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শহরে নানা ধরনের আয়োজন করা হয়। যেখানে শহরের মানুষরাই অংশ নেন। আমরা একটি প্রান্তিক এলাকায় রসুলপুরে ৯ বছর ধরে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছি। পাশাপাশি এখানকার শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করছি। ’কাচা হাতে বানানো শহীদ মিনার। ছবি: বাংলানিউজ
তিনি বলেন, ‘এটি দরদ্রি এলাকা, এখানকার শিশুরা প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এখানে মাদকের, সন্ত্রাসের বিস্তার রয়েছে এবং নানা ধরনের অন্ধকার জগতের হাতছানি এলাকাগুলোতে রয়েছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের আয়োজন শিশুদের মানসিক বিকাশ, বেড়ে ওঠা, দেশপ্রেম সৃষ্টির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমরা মনে করি, বাচ্চারা যখন কাচা হাতে এ শহীদ মিনারগুলো বানায়, তখন তাতে যে মমতা থাকে, ইতিহাস জানার যে আগ্রহ থাকে, সেই আগ্রহ আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়েই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের চেতনাটা তাদের মধ্যে পৌছে দিতে চাই। ৯ বছর ধরে চলা এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে এখানকার মানুষের মধ্যে ইতিহাস সচেতনতা তৈরি হয়েছে এবং এ কাজটি আমরা সবসময় করে যেতে চাই। ’

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: